Submitted by Nandarani Pramanik on Sun, 03/20/2011 - 11:20

বাচ্য বলতে সাধারণত বোঝায় প্রকাশভঙ্গি বা বাচনভঙ্গির রূপভেদ অর্থাৎ রূপের পরিবর্তন । যেমন— পুলিশ চোরটিকে ধরেছে । পুলিশের দ্বারা চোরটি ধরা হয়েছে । এখানে দেখা যাচ্ছে, বক্তব্য এক কিন্তু প্রকাশভঙ্গি আলাদা । সুতরাং বাচ্য হল ব্যক্তিভেদে বাচনভঙ্গি অনুযায়ী কর্তা, কর্ম বা ক্রিয়াপদের প্রাধান্য নির্দেশ করে ক্রিয়াপদের রূপের যে পরিবর্তন ঘটে, তাকেই বলে বাচ্য

বাচ্যের প্রকারভেদ :- বাচ্যের প্রকারভেদ চার প্রকার, যথা — (১) কর্তৃবাচ্য  (২) কর্মবাচ্য (৩) ভাববাচ্য  (৪) কর্মকর্তৃবাচ্য ।

(১) কর্তৃবাচ্য :- যে বাচ্যে বাক্যের কর্তা প্রাধান্য পায় এবং কর্তা অনুগামী ক্রিয়াপদ হয় সেই বাচ্যকে কর্তৃবাচ্য বলে । যেমন— রমা গান গায় । মোনা বই পড়ে । তবে মনে রাখতে হবে কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়াটি কখনো সকর্মক ক্রিয়া হয়, আবার কখনো কখনো অকর্মক ক্রিয়া হয় ।

(২) কর্মবাচ্য :-  যে বাচ্যে কর্মপদটি কর্তৃপদে পরিণত হয়ে বাচ্যে প্রাধান্য পায় এবং ক্রিয়া, কর্মের অনুগামী হয় তাকে কর্মবাচ্য বলে । যেমন— পুলিশ কর্তৃক চোরটি ধৃত হল । মীরার দ্বারা গানটা গাওয়া হল ।

(৩) ভাববাচ্য :-  যে বাক্যে ক্রিয়াপদটিই প্রধান হয় অর্থাৎ ক্রিয়ার উপর বেশি জোর দেওয়া হয়, সেই বাক্যকে ভাববাচ্য বলে । যেমন— আপনার কোথা থেকে আসা হচ্ছে ? এস যাওয়া হোক ।

(৪) কর্মকর্তৃবাচ্য :- যে বাক্যে কর্তার উল্লেখ থাকে না, কর্ম পদটিই কর্তার মতো কাজ করে, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে । যেমন— ঢাক বাজে । ঘুড়ি ওড়ে । পাতা নড়ে ইত্যাদি ।

বাচ্য পরিবর্তন

(১) কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তন :- কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করার সময় কতগুলি নিয়ম মেনে চলতে হয় । যেমন —

(ক) কর্তৃবাচ্যের পদকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করার সময় কর্তায় 'র', 'এর' বিভক্তি যুক্ত করা হয় । যেমন— আমি > আমার, তুমি > তোমার, ছেলেরা > ছেলেদের ইত্যাদি ।

(খ) কর্মপদের সঙ্গে 'দ্বারা', 'দিয়ে', 'কর্তৃক' অনুস্বর্গ যুক্ত হয় ।

(গ) কর্তৃবাচ্যের বাক্যে কর্ম না থাকলে সেই বাক্যকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করা যায় না ।

উদাহরণ :-

(কর্তৃবাচ্য) - আমি বই পড়ি ।  (কর্মবাচ্য) - আমার বইটি পড়া হয়েছে ।

(কর্তৃবাচ্য) - সিধু ছবি আঁকে । (কর্মবাচ্য) -সিধুর ছবি আঁকা হয়েছে ।

(কর্তৃবাচ্য) - পুলিশ চোর ধরেছেন । (কর্মবাচ্য) - পুলিশের দ্বারা চোরটি ধরা হয়েছে ।

(কর্তৃবাচ্য) - আমি যাব না । (কর্মবাচ্য) আমার যাওয়া হবে না ।

(২) কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তর :- কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তরিত করার নিয়ম হল—

(ক) কর্মবাচ্যের কর্মরূপী কর্তার বিভক্তি ও অনুসর্গ তুলে দিতে হয় ।

(খ) যৌগিক ক্রিয়ার সমাপিকা অংশটি লুপ্ত হয়, অসমাপিকা ক্রিয়ার ধাতুটির সঙ্গে কর্তার পুরুষ, বচন ও বিভক্তি যুক্ত করে তৈরি করতে হয় ।

উদাহরণ:- 

তোমার দ্বারা এ কাজ হবে না (কর্মবাচ্য) । তুমি এ কাজ করতে পারবে না (কর্তৃবাচ্য) ।

আমার ভাত খাওয়া হয়ে গেছে (কর্মবাচ্য) । আমি ভাত খেয়েছি (কর্তৃবাচ্য) ।

মধুসূদন দ্বারা মেঘনাথ বধ কাব্য রচিত হয়েছে (কর্মবাচ্য) ।  মধুসূদন মেঘনাদ বধ কাব্য রচনা করেছেন (কর্তৃবাচ্য) ।

(৩) কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্যে রূপান্তর :- কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্যে রূপান্তর করার নিয়মগুলি হল —

(ক) ভাববাচ্যে ক্রিয়া প্রধান হয়, কর্তৃপদ, কর্মপদ সব গৌণ, কর্তৃপদের সঙ্গে 'র', 'এর' বিভক্তি যুক্ত হয় ।

(খ) কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়ার মূল ধাতুর সঙ্গে 'আ' প্রত্যয় যোগ করে ক্রয়াবিশেষ্য পদ গঠন করা হয়, এরপর কোথাও 'হ' বা 'যা' ধাতুর আগমন ঘটে ।

উদাহরণ:-

আমি স্কুলে এসেছি (কর্তৃবাচ্য) । আমার স্কুলে আসা হয়েছে (কর্মবাচ্য) ।

ভিতরে এসে বস ( কর্তৃবাচ্য) । ভিতরে এসে বসা হোক (কর্মবাচ্য) ।

পুলিশ সন্দেহ করেছিল ( কর্তৃবাচ্য) । পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল (কর্মবাচ্য) ।

প্রশ্নোত্তর

(১) সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো

(১.১) বাংলায় সাধারণত বাচ্য — (ক) দুই প্রকার      (খ) তিন প্রকার     (গ) চার প্রকার      (ঘ) পাঁচ প্রকার ।

(১.২) কর্মবাচ্যে ক্রিয়াটি হয় — (ক) অকর্মক ক্রিয়া     (খ) সকর্মক ক্রিয়া     (গ) যৌগিক ক্রিয়া      (ঘ) মৌলিক ক্রিয়া ।

(১.৩) বাচনরীতির রূপভেদকে বলা হয় — (ক) বাক্য      (খ) উদ্দেশ্য      (গ) বিধেয়     (ঘ) বাচ্য

(১.৪) কর্তা অনুসারে ক্রিয়ার রূপ হয় — (ক) কর্তৃবাচ্য      (খ) কর্মবাচ্য       (গ) ভাববাচ্য      (ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য ।

(১.৫) দ্বারা, কর্তৃক ইত্যাদি অনুসর্গ প্রয়োগ করা হয় — (ক) কর্তৃবাচ্যে       (খ) কর্মবাচ্যে       (গ) ভাববাচ্যে       (ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্যে ।

(১.৬) 'মন্দিরে শঙ্খ বাজে' — উদাহরণটি হল-  (ক) কর্মবাচ্যের      (খ) ভাববাচ্যের       (গ) কর্মকর্তৃবাচ্যের      (ঘ) কর্তৃবাচ্যের ।

(১.৭) ভাববাচ্যের ক্রিয়াটি সচরাচর যে ধাতু নিস্পন্ন হয়ে গঠিত হয় তা হল— (ক) কর্ ধাতু     (খ) 'হ' ধাতু     (গ) আছ্ ধাতু      (ঘ) পা ধাতু

(২) নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন কর :- 

(২.১) বিদ্যাসাগর বর্ণপরিচয় রচনা করেছেন - কর্মবাচ্যে

 উঃ বিদ্যাসাগরের দ্বারা বর্ণপরিচয় রচনা করা হয়েছে ।

(২.২) মহারাজ শুনুন - । (ভাববাচ্যে)

 উঃ মহারাজের শোনা হোক ।

(২.৩) ছেলেরা মাঠে ফুটবল খেলছে - । (কর্মবাচ্যে)

উঃ ছেলেদের দ্বারা মাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছে ।

(২.৪) সকলে এসেছে - । (ভাববাচ্যে)

উঃ সকলের আসা হয়েছে ।

(২.৫) তোমার আসা হবে । (কর্তৃবাচ্যে)

উঃ তুমি আসবে ।

(২.৬) আমি চাঁদ দেখেছি । (কর্মবাচ্যে)

উঃ আমার দ্বারা চাঁদ দেখা হয়েছে ।

(২.৭) মায়ের চিঠি লেখা হয়েছে । (কর্তৃবাচ্যে)

উঃ মা চিঠি লিখেছেন ।

(২.৮) পুরোটাই শোনানো হল । (কর্তৃবাচ্যে)

উঃ পুরোটাই শুনেছি ।

(২.৯) ওরা চাষ করে । (ভাববাচ্যে)

উঃ ওদের চাষ করা হয় ।

(২.১০) গীতায় পড়েছি । (ভাববাচ্যে)

উঃ গীতায় পড়া হয়েছে ।

(৩) অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

(৩.১) বাচ্য কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।

(৩.২) বাংলায় বাচ্য কয় প্রকার ও কি কি ?

(৩.৩) কর্তৃবাচ্য কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।

(৩.৪) উদাহরণসহ ভাববাচ্যের সংজ্ঞাটি লেখ ।

(৩.৫) কর্মপদের প্রাধান্য থাকে কোন বাচ্যে ?

(৩.৬) ক্রিয়াপদ প্রধান হয় কোন বাচ্যে ?

(৩.৭) কর্মকর্তৃবাচ্য কাকে বলে ?

(৩.৮) কোন বাচ্যের রূপান্তর করা যায় না ?  উঃ - কর্মকর্তৃ বাচ্যের ।  

***

Related Items

Madhyamik Examination (WBBSE) - 2022 Bengali (First Language)

২০২২

বাংলা - প্রথম ভাষা

সময় — ৩ ঘন্টা 15 মিনিট

বৃক্ষরোপণ-উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা কর ।

প্রশ্ন : বৃক্ষরোপণ-উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা কর

 উত্তর:- 

নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা কর ।

নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা কর 

উত্তর:-

বঙ্গানুবাদ (Translate into Bengali)

ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলা ভাষাতে অনুবাদ করাকে বঙ্গানুবাদ বলে । মাধ্যমিক পরীক্ষায় আগত বিভিন্ন বঙ্গানুবাদ নিচে তুলে ধরা হলো --

"পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য ।" — লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ কী ?

প্রশ্ন:- "পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য ।" — লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ কী ?