প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

Submitted by Nandarani Pramanik on Wed, 12/13/2017 - 01:49

প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

সূচনা :- মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যাদের মধ্যে রয়েছে তাদেরকে আমরা প্রতিবন্ধী বলি । প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ মানুষ । যে মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছু বেশি থাকে অর্থাৎ চলাফেরায় বা কথাবার্তায় যে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয় সেই প্রতিবন্ধী । কিন্তু এরাও সমাজের অন্তর্ভুক্ত । এদেরকে অবহেলা করে বা এদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে চললে কখনই সমাজের উন্নতি সাধন করা যায় না । এদের কে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে ।

প্রতিবন্ধীদের শ্রেণীবিভাগ :- প্রতিবন্ধীদের দুটি শ্রেণী – (১) শারীরিক প্রতিবন্ধী ও (২) মানসিক প্রতিবন্ধী । অন্ধ, বোবা, বধির, খোঁড়াদের বলা হয় শারীরিক প্রতিবন্ধী আর যাদের মানসিক ভারসাম্য নেই, বোকা, উন্মাদ তাদেরকে মানসিক প্রতিবন্ধী বলা হয় । কেউ কেউ জন্ম থেকে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় আবার কেউ মারাত্মক অসুখে ভুগে বা বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধী হয় । যে কোনো প্রতিবন্ধকতা মানুষের কাছে অবাঞ্ছিত এবং দুঃখজনক । শত দারিদ্রের মধ্যেও স্বাভাবিক জীবনের অধিকারী যে সে সুখী আর বিপুল ঐশ্বর্যের মধ্যে থেকেও একজন বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী কখনই সুখী হতে পারে না ।

প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য :- প্রত্যেক প্রতিবন্ধীই এই সমাজের অন্তর্ভুক্ত । তারা অন্য কোনো গ্রহের অন্য কোনো জীব নয় —একথা সবার প্রথমে আমাদের মনে রাখতে হবে । অনেক প্রতিবন্ধী আছে যারা মানসিক ভাবে দুর্বল হলেও শারীরিক দিক থেকে বেশি সক্ষম । তাদের সেই সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের বেঁচে থাকার আশ্বাস যোগাতে হবে । তাদের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মানুষের একান্ত কর্তব্য । যে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী যেমন অন্ধ, খোঁড়া তাদের প্রতি আমাদের সহৃদয় হওয়া একটা সামাজিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে । ‘অন্ধজনে দেহ আলো’ —আলো না দিতে পারি ভালবাসা তো দিতে পারি ।

প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন :- বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা বিদ্যার সাহায্যে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসা করে প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হচ্ছে । কৃত্রিমভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের সফল প্রয়োগে অনেকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাছে । অনেকে শ্রবণ ক্ষমতাও ফিরে পাছে । আবার জটিল মানসিক প্রতিবন্ধী সুস্থ হয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসছে । তবে সে সুযোগ বা সুবিধা খুব কম সংখ্যক মানুষ উপভোগ করছে ।

সরকারি বা বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী সমস্যা অনেকটা দূর করার চেষ্টা চলছে । প্রতিবন্ধীদের জন্য পদ সংরক্ষণ করে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীরা চাকরি করে নিজেদের জীবন নির্বাহ করছে । আমাদের কোলকাতা শহরে ‘ডিফ এন্ড ডাম্ব’ স্কুল বেহালার ব্লাইন্ড স্কুল, নরেন্দ্রপুরে রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড স্কুল বিভিন্ন এন.জি.ও. বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করে চলেছে । এভাবে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদেরও এদের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে । এটাই আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে ।

উপসংহার :- জীব সেবা মানেই শিব সেবা । মানবসেবা হল পরম সেবা । কারণ ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ —একথা সকল মানব প্রেমিকেরাই বলে গেছেন । তাই প্রতিবন্ধীদের পাশে থেকে তাদের বন্ধু হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে । যদি আমরা তাদের ভালোবেসে কাছে টেনে না নিই তাহলে তাদের চোখের জল আমাদের মসৃণ পথ পিছিল করে দেবে ।

***

   

Comments

Related Items

ছাত্র জীবনে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা

'ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ' । ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কাজ হল পড়াশুনা করা । পড়াশুনাকে তপস্যার মতো করেই করা দরকার ।

বিশ্বের ত্রাস মহামারী করোনা

ভুমিকা:- একবিংশ শতাব্দীতে সভ্যতার শিখরে বাস করেও মানুষ ভয়ঙ্কর এক মহামারির মোকাবিলা করতে পারেনি । সেই মহামারি হল করোনা । ধনী বা দরিদ্র কোন দেশই করোনা নামক মহামারির কবল থেকে রেহাই পায়নি । করোনা এমনই এক রোগ যা অতি দ্রুত মানুষকে সংক্রমিত করে । এটা নতুন রো

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্প

"বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি । / দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী — / মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু, / কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু / রয়ে গেল অগোচরে । বিশাল বিশ্বের আয়োজন ; / মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ ।" — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

যুগে যুগে বাংলার বুকে যে সকল ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ জন্মেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁদের মধ্যে অন্যতম । ঈশ্বরচন্দ্রের পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা, কর্মনিষ্ঠা, নির্ভীকতা, হৃদয়বত্তা মানবসমাজে এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত । হিমালয়ের মতো বিশাল ও উন্নত মনের মানুষ ঈশ্বরচন্দ্র শুধুমাত্র বিদ্যাসাগর ছিলেন না, করুণার সিন্ধুও ছিলেন ।

রক্তদান — মানবকল্যাণের আর এক নাম

"দেহের একটু রক্ত দিলে যদি বাঁচে একটি প্রাণ, / ধন্য হবে জনন তোমার, মহৎ তোমার দান । "